মালতী কার্ড দিয়ে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য ! নাঙ্গলকোটে কৃষি জমির মাটি কাটার মহোৎসব

নাঙ্গলকোট প্রতিনিধি ।।
প্রকাশ: ৩ মাস আগে

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৬ ইউনিয়নে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালতী কার্ড দিয়ে লাখ লাখ টাকা চাঁদা তুলে নির্বিচারে কৃষি জমি ও সরকারি খালের মাটি কেটে ইটভাটা, বিভিন্ন স্থাপনা ও নতুন বাড়ি নির্মাণকারীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে কৃষি জমি ধ্বংস, সড়ক নষ্ট ও ধুলাবালির কারণে শিশু, বৃদ্ধ সহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অবৈধ ট্রাক্টরের বেপরোয়া গতির কারণে ধুলাবালিতে উপজেলার প্রায় সকল সড়কে দিনের বেলায়ও রাতের অন্ধকার নেমে আসে। প্রশাসন কিছু স্থানে অভিযান চালালেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ফলে তিন ফসলি জমিকেও পুকুর বানাচ্ছে মাটি সন্ত্রাসীরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের কাদবা, সোনাবেরী, করের ভোমরা, ছোট স্বাঙ্গীশ্বর, পেরিয়া ইউনিয়নের আশারকোটা, উত্তর শাকতলী, শ্রীফলিয়া, কাজী জোড়পুকুরিয়া, চেহরিয়া, শিবপুর, মক্রবপুর ইউনিয়নের তুলাগাঁও, বাতড়া, রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের ছুপুয়া, রায়কোট, অলিপুর, শ্রীরামপুর, মাহিনী, খড়ঘর, রায়কোট দক্ষিণ ইউনিয়নের শ্যামিরখিল, মালিপাড়া, মন্তলী, বাসন্ডা, ঝাটিয়াপাড়া, পশ্চিম বামপাড়া । মৌকরা ইউনিয়নের তেতৈয়া, কেশতলা, চান্দাইশ, করাকোট, পৌঁছির, বটতলী ইউনিয়নের কাশিপুর, উল্লাখালি, ঢালুয়া ইউনিয়নের বদরপুর, বায়েরা, মগুয়া, মন্নারা, বক্সগঞ্জ ইউনিয়নের শুভপুর, কদমতলী, বড়কালী, কোকালী, পৌরসভার অশ্বদিয়া-সহ উপজেলা ও পৌরসভার অন্তত ১শ’ স্থানে মাটি কাটা হচ্ছে। ফলে ট্রাক্টরের দখলে চলে গেছে উপজেলার অধিকাংশ সড়ক। ট্রাক্টরের ধুলাবালির কারণে সড়কে চলাচলকারীরা চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে স্কুল, মাদ্রাসা গামী শিশু কিশোর ও চাকুরীজীবীরা। সড়কের পাশের বাড়ি ঘরে ধুলাবালি প্রবেশ করার ফলে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে অনেকের।

সোমবার উত্তর শাকতলী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাটি কেটে কৃষি জমি পুকুর বানিয়ে ফেলা হয়েছে। মাটি গুলো ভ্যাকু মেশিনে কেটে ট্রাক্টরে করে ইটভাটায় ও নতুন বাড়ি ভরাট করতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয়রা জানান, ভ্যাকু ও ট্রাক্টর গুলো উপজেলার বাঙ্গড্ডা গ্রামের মোহাম্মদ লিটনের। লিটন প্রভাবশালী হওয়ায় ভূক্তভোগী এলাকাবাসী তাকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।

স্থানীয় আশারকোটা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ স্বপন ও মনির হোসেন মিয়াজী বলেন, জমির উপরিভাগের সব মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। আবার অনেক জমি থেকে ১০ থেকে ১৫ ফুট গভীর করে মাটি কাটা হচ্ছে। এছাড়া মাটি কেটে ট্রাক্টরে করে সড়কে উঠাতে সড়ক গুলোর বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও সড়কের পাশের সরকারি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। সড়কের আশ-পাশের বাড়ি ঘরে ধুলাবালির কারণে মানুষ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে বাঙ্গড্ডা গ্রামের ট্রাক্টর ও ভ্যাকু মালিক মোবারক হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমরা নাঙ্গলকোট পৌরসভা মেয়রের ছোট ভাই পৌরসভার কোদালিয়া গ্রামের খোরশেদ আলমের কাছ থেকে প্রশাসনকে ম্যানেজ করার জন্য প্রতিটি ভ্যাকু ৫ হাজার ও প্রতিটি ট্রাক্টর সড়কে চলাচলের জন্য ২ হাজার টাকা দিয়ে মালতী কার্ড নিয়েছি। এখন মাটি কাটা বা বহন করায় আমাদেরকে কেউ কিছু বলতে পারবে না। যদি বলে বিষয়টি খোরশেদ ভাই দেখবে।

এ বিষয়ে খোরশেদ আলম বলেন, অনেক সাংবাদিক আমার সাথে দেখা করেছে, আপনারাও দেখা করেন। কেন দেখা করতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখা হলে বুঝবেন।

নাঙ্গলকোট থানা অফিসার ইনচার্জ দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, মালতী কার্ডের বিষয়ে আমি আপনাদের কাছে জেনেছি, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা।

নাঙ্গলকোট উপজেলা কৃষি অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, কৃষি আবাদি জমির ৬ থেকে ১০ ইঞ্চি মাটি যদি কেটে নেয়া হয় তাহলে এই জমির যে ক্ষতি হবে সেই ক্ষতি পূরণ হতে ৮০/১০০ বছর সময় লাগবে। এ অপূরণীয় ক্ষতি থেকে বাঁচতে আমরা কৃষকদেরকে নিয়ে করা প্রত্যেকটি সভা সেমিনারে উদ্বুদ্ধ করে থাকি।

নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি এবং বেশ কিছু অভিযান করে তাদেরকে শাস্তির আওতায় এনেছি। আজকেও রুবেল নামে এক ব্যাক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।