অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না গুলিবিদ্ধ স্কুল ছাত্র সিয়াম

# ভর্তি আছে কুমিল্লা ট্রমা হাসপাতালে # সরকার,রাজনৈতিক দল ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দদের প্রতি সহযোগিতার আহবান
হুসাইন বিল্লাল ।।
প্রকাশ: ১০ মাস আগে

গত ৫ আগস্ট দেবিদ্বারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় স্কুল শিক্ষার্থী সিয়াম মজুমদার। বোনের জন্য সুতা কিনতে বাজারে আসলে সেখান থেকে ফেরার পথে আন্দোলনে যোগ দেয় সে। সেখানে দুপুর ২ টার দিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাকে দেবিদ্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তখন তার গায়ে ২ টি গুলি লাগে। একটি পিছন দিক থেকে ঢুকে মুত্রথলি ভেদ করে সামনে দিয়ে বের হয়। আরেকটি গুলি লাগে পেটে। বর্তমানে সে কুমিল্লা ট্রমা হসপিটালে চিকিৎসাধীন আছে।
সিয়াম মজুমদার কুমিল্লা জেলার, দেবিদ্বার উপজেলার বারেরা গ্রামের কৃষক অহিদ মজুমদারের ছেলে। তার বয়স ১৪ বছর। সে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নিম্নবিত্ত পরিবারের পক্ষে সিয়ামের চিকিৎসা ব্যয় চালানো খুবই কষ্টকর বলে জানান তার মা। এ পর্যন্ত সিয়ামের চিকিৎসায় তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। আরো প্রায় দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা লাগবে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অনেকে এসে সিয়ামকে দেখে গেলেও কোন প্রকার সহায়তা পান নি পরিবারটি।
কৃষক বাবা অহিদ মজুমদারের এক ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সিয়াম সবার ছোট। বড় বোন সেলাইয়ের কাজ করেন। দ্বিতীয় বোন এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বড় বোনের সেলাই কাজের সুতোর জন্য ছোট ভাইকে বাজারে পাঠিয়েছিলেন। বাজার থেকে ফেরার পথে সাধারন শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেয় সিয়াম। সেখানে আওয়ামিলীগ ও পুলিশের আক্রমনে গুলিবিদ্ধ হয় সে। আহত সিয়ামকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত কুমিল্লায় পাঠান। কুমিল্লার কয়েকটি হাসপাতালে ঘুরে ব্যার্থ হলে পরে তাকে কুমিল্লার ট্রমা হসপিটালে ভর্তি করানো হয়।
সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে তার মা বলেন, আমার দুই মেয়ে এক ছেলে। ছেলেকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। সেই ছেলেটা আজ এতবড় অসুস্থ হয়ে হাসপাতেল পরে আছে। ধার দেনা করে আমরা কোনরকম চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। এই মুহুর্তে সরকার ও সমাজের বিত্তবানরা আমাকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করছি। আমার স্বামী একজন কৃষক। আমার ছেলের চিকিৎসা খরচ ৩ লাখের বেশি চলে গেছে। ডাক্তার বলছে আরো একটা অপারেশন করতে হবে। সহযোগিতা ছাড়া আমাদের পক্ষে চিকিৎসা ব্যয় চালানো খুব ই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সিয়াম মজুমদারের চিকিৎসা ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রমা হসপিটালের কর্তব্যরত ডাক্তার ও চীফ মেডিকেল অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, সিয়ামকে যেদিন এখানে আনা হয় সেদিন প্রায় ৪০/৪৫ জন রোগী ভর্তি হয়। সিয়ামকে অন্য কোথায় পাঠাইলে পথিমধ্যে মারা যেতে পারে। এজন্য আমরা তাকে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা শুরু করি। ডাক্তার সফিউল আলম মিঠু স্যার ৫ ই আগস্ট বিকাল চারটায় সিয়ামের অপারেশন শুরু করে। দীর্ঘ ৬ ঘন্টা সময় দিয়ে আমরা তার প্রথম অপারেশন করি। কিছুদিন পর আরো একটি অপারেশন করা হয়। সিয়ামের দুটি গুলি লাগে। একটি পেটে ও আরেকটি পিছন দিক থেকে মূত্রনালি ভেদ করে ঢুকে যায়। এ কারনে তার মুত্রনালিতে সমস্যা রয়ে গেছে। এটা সেরে উঠতে অনেক সময় লাগবে। তার চিকিৎসা অনেক ব্যায়বহুল। বর্তমানে সে ঝুকিমুক্ত আছে। আমরা কিছুদিন পর আরেকটি অপারেশন করবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কের একজন বলেন, সিয়াম যদি কোথাও হতে সহযোগিতা না পেয়ে থাকে আমরা তাকে সহযোগিতা করব। তার চিকিৎসার যত ডকুমেন্টস আছে এগুলা আমাদেরকে পাঠাইলে আমরা আমাদের স্থানীয় কোন প্রতিনিধি দিয়ে তার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করব।