ঈদুল আজহার পরের দিন দুপুর আড়াইটা। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মান্নাননগর বাজারে সবুজ সাথী মেডিসিন কর্নারের সামনে কয়েকজন মানুষের ভিড়। সেখানে বসে দোতারা বাজিয়ে গান গাইছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রায়হান। তার চোখের কোনো ভাষা না থাকলেও মনের ভাষাগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন সবার মাঝে। সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছেন তার লালনগীতি ও বাউলগান।
এ সময় কথা হয় রায়হানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার দুই বছর বয়সে চোখ উঠেছিল। তারপর থেকে আমি অন্ধ হয়ে যাই বলে বাবা-মায়ের মুখে শুনছি। এ কারণে অনাদরেই কাটে আমার জীবন। চোখে না দেখায় ৮-১০ বছর আগে হাতে তুলে নেই দোতারা। তারপর থেকেই এভাবে হাট-বাজারে গান গেয়ে চলেছি। এতে দিনে আয় হয় গড়ে ২০০ টাকা। এই টাকা দিয়েই চলে সংসারের খরচ ও চারজন মানুষের জীবন-জীবিকা। তবে এবার ঈদে সন্তানদের একটি নতুন জামাও কিনে দিতে পারিনি বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
রায়হান আরো বলেন, উলিপুর হাটখোলার পাশের সরকারি জায়গায় একটি ঘর তুলে কোনোরকমে থাকি। মেম্বারকে বলেছিলাম একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে। কিন্তু পাইনি। ঘরে দুটি ছেলে-মেয়ে। তাদের ভালো কিছু দিতে পারি না। তাদের জন্য ঈদের কোনো পোশাকও কিনতে পারিনি। স্ত্রীর কথা না হয় বাদই দিলাম। গান গেয়ে যে টাকা পাই, তাই দিয়ে কোনো রকমে চলে সংসার।
ছেলেমেয়ের পড়াশোনার বিষয়ে তিনি বলেন, ছেলেটির বয়স চার বছর। সে এখনো স্কুলে যায় না। তবে মেয়েটি স্থানীয় একটি মাদরাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তার বই-খাতা-কলমও ঠিকমতো কিনে দিতে পারি না।
সবুজ সাথী মেডিসিন কর্নারের স্বত্বাধিকারী পল্লি চিকিৎসক গোপাল চন্দ্র ঘোষ বলেন, রায়হানকে অনেক বছর ধরে চিনি। তার পরিবারের সবাইকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছি। তিনি আমার দোকানে এসে গান শোনান। আমরাও মুগ্ধ হয়ে তার গান শুনি। সব সময় যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করি। তবে সরকার যদি তার ও পরিবারের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে তার দুটি ছেলেমেয়ে বড় হতে পারবে।
সদর ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আব্দুস সালাম বলেন, রায়হান নিঃস্ব একজন মানুষ। সবাই মিলে তাকে একটি ছোট্ট ঘর তোলার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। এই পৌরসভার দায়িত্বে আছেন ইউএনও। তার নামটি ইউএনও বরাবর জমা দিয়েছি।
সদর ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল শেখ বলেন, রায়হানের বিষয়টি আমার জানা নেই। এছাড়া ওই এলাকা এখন পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত। তবে বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে তার জন্য কিছু করার চেষ্টা করা হবে। তার ছেলেমেয়ের জন্য নতুন পোশাকের ব্যবস্থা করব।
তাড়াশের ইউএনও মো. মেজবাউল করিম বলেন, আপাতত বন্যার কারণে গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ আছে। তবে আগামী সেপ্টেম্বরে আবার শুরু হবে। খোঁজখবর নিয়ে অবশ্যই তাকে একটি সরকারি ঘরের ব্যবস্থা করে দেব।