কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিসে টাকা দিলেই মেলে ছাড়পত্র

# আসছে তাপদাহ, বাড়ছে অগ্নিঝুঁকি
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ মাস আগে

কুমিল্লা নগরীতে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই গড়ে উঠছে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ। আবার কেউ কেউ গোপনে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের যোগসাজশে টাকা দিয়ে যাচাই-বাছাই ছাড়াই ছাড়পত্র নিয়ে নিচ্ছে। সামনে তাপদাহ এর মাত্রা বেড়ে গেলে অগ্নিঝুঁকি বেড়ে যাবে। তখন এসব ভবন গুলো ঝুকিপূর্ণ থাকবে বলে মনে করছে বাসিন্দারা।
গত কয়েক দিন কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকার ভবন মালিকদের সাথে কথা বলে তার সত্যতা পাওয়া যায়।
জানা যায়, ফায়ার সার্ভিসের আইনে ৬ তলার উপরে ভবনকে বহুতল ধরা হয়। ভবন নির্মাণ মালিকরা অন্যান্য দপ্তরের ন্যায় ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অসাধু উপায়ে ভবন নির্মাণ পরিকল্পনা অনুমোদন পেয়ে যাচ্ছে। একটি ভবনে মূল সিঁড়ির বাইরেও আলাদা একটি সিঁড়ি রয়েছে। কিন্তু আদৌ ভবন মালিকরা তা না মেনে ভবন নির্মাণ করেই চলছে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এখানকার মানুষ কিভাবে বের হবেন তার নিশ্চয়তা নেই। কুমিল্লা নগরীতে এমন শত শত স্থাপনা গড়ে উঠেছে। অনেক ভবনে অতিরিক্ত সিঁড়ি বা ফায়ার এক্সিট পাওয়া যায়নি। কোনো কোনো ভবনে বিকল্প সিঁড়ি থাকলেও বের হওয়ার পথটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। মূলত একেকটি ভবনের ক্যাটাগরি অনুযায়ী, আলাদা আলাদা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার বিধান রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের বিবেচনায় মোটাদাগে যে কয়টি কারণে অগ্নিনির্বাপণ ও বিকল্প সিঁড়ির ব্যবস্থা রাখতে হয়, তা হলো- আয়তন, মানুষের ঘনত্ব এবং ভবনটি বহুতল কিনা। ভবনের মালিকরা এসব নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অনুমোদন নিয়ে নিচ্ছে।
নগরীর ২য় মুরাদপুর এলাকার ইউনাইটেড টাওয়ারের এক ভাড়াটিয়া বলেন, ভবনটিতে কোনো অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। যে ভবনে বিকল্প সিঁড়িসহ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আছে সেখানে আমরা চলে যাচ্ছি। এখানে আমরা নিরাপদ বোধ করছি না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভবনটি আবাসিক-বাণিজ্যিক মিশ্র। কিন্তু এখানে একটি মাত্র সিঁড়ি ছাড়া আর কোনো জরুরি বহির্গমনের ব্যবস্থা নেই। বাড়ির মালিক জামিল জানান, এভাবেই প্ল্যান অনুমোদন পেয়েছি।
নানুয়া দীঘির পাড় এলাকার চৌধুরী হাউজ ভবনের মালিক জামাল চৌধুরী বলেন, ভবন নির্মাণের অনুমতি নিতে যা একটা কষ্ট হয় মনে হয় সারাজীবন চাকুরী করেও এত কষ্ট লাগেনা। ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি নিছি তবে সেটা দেখানো যাবেনা। ফায়ার সার্ভিসের স্যারকে ম্যানেজ করা আছে। আর এসব জেনে আপনি কি করবেন!
অশোকতলা এলাকার রোজ ভবনের মালিক রাশেদা বলেন, আমি ভবন নির্মাণ করতে সিটি করপোরেশনের প্লান পাশ করেই করেছি। ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি কেন নেইনি, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারবনা। আর তারাও আমাদের এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করে না।
অভিযোগ অস্বীকার করে কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ইকবাল হোসেন বলেন, আমার আগে এমনটা হতে পারে। আমি নতুন আসছি। এসব বিষয়ে আমাদের ডিপার্টমেন্টের নির্দেশনা যেভাবে আছে ও আলাদা কমিটি তদন্ত করে যা পায় সে অনুযায়ী ভবন মালিকদের ছাড়পত্র দেয়া হয়ে থাকে। আর ৭ তলার উপরে কেউ করলে ২০ ফিট রাস্তা থাকতে হবে। ভবনে অবশ্যই একটি জরুরি বহির্গমনের পথ রাখতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে আগুন নেভানোর জন্য যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়, তা দিয়ে নিচতলা থেকে সবোর্চ্চ ৬ তলা পর্যন্ত পানি ওঠানো যায়।