গোমতী নদীতে পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৪ সপ্তাহ আগে

পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব হচ্ছে গ্রামবাংলার একটি ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্য উৎসব পালনে প্রতিবছর এই সময় এলেই কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী কটকবাজার এলাকায় নানা স্থান থেকে গোমতির পাড়ের আসেন শত শত মানুষ।
কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব আগের মতো জাঁকজমক না হলেও গান ও হৈ-হুল্লোড় কোনো কমতি ছিল না গোমতি নদীতে । উৎসব দেখতে ভিড়ে করেন উৎসুক জনতা। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মৎস্য শিকারিদের ভিড়।
গতকাল বরিবার (১৬ ফ্রেরুয়ারি) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, গোমতি নদীর কটকবাজার এলাকায় চারদিকে ফাগুনের ঝিরিঝিরি হাওয়া। ধুলা উড়ছে। গোমতীর পাড়ে জড়ো হয়েছেন বেশ কয়েকজন। কারও হাতে পলো। কারও হাতে কনুই জাল। কেউবা এসেছেন বেড় জাল নিয়ে।
বছরের ফাল্গুন মাসে গোমতী নদীর পানি কমে তলানিতে জমা হয়। তখন এর বুকে চলে মৎস্য শিকার উৎসব। এমনই এক উৎসবে যোগ দিতে আজ রবিবার জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মৎস্য শিকারিরা ভিড় জমান।কেউ কনুই জাল ছুড়লেন। কেউ হাতের পলো চেপে ধরলেন পানিতে। কিছুক্ষণ পরই শোনা গেল উল্লাস। কারও জালে ধরা পড়ছে কার্প, কারও জালে বাগাড়। কেউ পলোতে চেপে ধরছেন বড় রুই মাছ।
চৌদ্দগ্রাম থেকে আসা আমিন মিয়া গোমতীর টিক্কারচর ব্রিজের নিচে অন্তত ৭ কেজি ওজনের একটি কার্প মাছ পেয়েছেন। তিনি বললেন, ‘আমি যহন পলোডা লইয়া বাড়িত থাইক্কা আই হেসুমকালা আমার মাইয়াডা কয়, আব্বা দোয়া পইড়া দিলাম। তুমি একটা বড় মাছ পাইবা। আমার মাইয়ার কথাডা ফলছে। মাইয়ার জামাইডা বাইত আইছে। এত্ত বড় মাছটা দেখলে অক্করে বেজায় খুশি হইবো।’
কালের পরিক্রমায় নদীতে মাছের সংখ্যা কমে এলেও মৎস্য শিকারিদের উৎসবে ভাটা পড়েনি এতটুকু।
এদিকে নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট থেকে আসা শৌখিন শিকারি কালা মিয়া বলেন, ‘দুই ঘণ্টা পলোডা চাপছি। আৎকা একটা লাড়া দিল। আরও চাপ দিয়া ধরছি। আমার ভাই শামীম আর আমি চার কেজি ওজনের মাছটা পাড়ো তুলছি।’
দেবিদ্বার থেকে আসা কৃষক রহমত মিয়া বলেন, ‘চার কেজি ওজনের একটা বাগাড় মাছ পাইছি। মানুষে বাগাড়টা কিনতে চায়। আমি বেচি নাই। মাছতো বেচতাম পাইরাম কিন্তু কিন্না খাইতাম পারতাম না। টেকার লোভ করি নাই।’
এই বিষয় ইতিহাসবিদ ও গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, ‘গোমতীতে মাছ ধরার উৎসবটি আমাদের শত বছরের ঐতিহ্য। একসময় এই নদীতে বড় বোয়াল, বাগাড়, চিতল, কালিবাউশ, রুই-কাতলা পাওয়া যেত। সেগুলো নগরীর রাজগঞ্জ বাজারে বিক্রি হতো।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক সুমি আক্তার বলেন, সময়ের পরিক্রমায় কমেছে গোমতীর পানি ও মাছের আনাগোনা। এখন যৎসামান্য কিছু মাছ পাওয়া যায়। যদি গোমতীকে শাসন না করে পরিকল্পনা অনুযায়ী খনন করা যেত, তাহলে গোমতী তার আগের রূপ ফিরে পেত এবং জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ হতো।’