দুই হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি থাকলেও ১৯ মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না কর্মকর্তা কর্মচারীরা

কুমিল্লা কেটিসিসিএ :
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৭ মাস আগে

কুমিল্লা কেটিসিসিএ লিমিটেডের প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি পরিচালনার অভাবে বিলিনের পথে। স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই কুমিল্লা অঞ্চল ছিল সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। তখন ড. আখতার হামিদ খান কেটিসিসিএ লিমিটেড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কুমিল্লা অঞ্চলকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই কেটিসিসির সম্পত্তি রয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার। অথচ এই সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রায় ১৯ মাসের মতো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। পিকেএসএফ এর নামে কয়েক কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হলেও আদায় অবস্থা শূন্য। প্রতিটি শাখায় একই অবস্থা। সমবায়ীদের দাবী এখনো কেটিসিসিকে বাঁচানো সম্ভব। যদি কেটিসিসি লি: এর উপর উন্নয়নের জন্য একটি ডিপিপি তৈরী করা যায় এবং তা বার্ডের পরিচালকের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কেটিসিসিকে বাঁচাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিনকেও এগিয়ে আসতে হবে বলে জানান প্রকৃত সমবায়ীরা।

জানা যায়, বর্তমানে কেটিসিসিএ লিমিটেডে প্রায় ২৪০ জন সমবায়ী সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে সমিতির ৫৫ শতাংশ সদস্য কার্যকর রয়েছেন এবং প্রায় ৪৫ শতাংশ সদস্যই অচল। সদর উপজেলার দক্ষিণ পশ্চিম কর্নারে কেটিসিসিএ লিমিটেডের প্রায় ১২ শতক ভূমিতে মাজেদা আক্তার লাভলি বসবাস করেন। রহস্যজনকভাবে তিনি এর কোনো ভাড়া প্রদান করেন না।কেটিসিসিএ লিমিটেডের প্রবেশ মুখে ৩৩টি দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানেই ভাড়াটিয়া রয়েছে। যারা প্রতি মাসে ভাড়া প্রদান করে থাকে।

ভাড়াটিয়াদের মৌখিক তথ্যে জানা যায়, বিভিন্ন সময় অনেক দোকান হাত বদল হয়েছে। ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে অগ্রিম ২০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে ৩ হাজার টাকা করে ভাড়া আদায় করা হয়। অথচ কেটিসিসিএ লিমিটেডের তহবিলে জমা হচ্ছে এক হাজার টাকা করে। ২০নং দোকানটি ভাড়া নিয়েছেন সিদ্দিক মিয়া। যিনি বর্তমানে দোকানটিতে দখলেও আছেন। তার থেকে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। একই ভাবে রাজগঞ্জ দেশয়ালীপট্টির প্রবেশ মুখে ৯৬টি দোকান রয়েছে। কেটিসিসি: এর নামে নামমাত্র ভাড়া আদায় করা হলেও অথচ ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। একই ভাবে সোনাইছড়ি প্রকল্পে কয়েক শতাধিক ঘর থাকলেও নামমাত্র ভাড়া আদায় হচ্ছে। ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করে জমা করা হয় ৫ হাজার টাকা। এই ধরনের অভিযোগ অসংখ্য। লক্ষ্মীপুর চৌমুহনীতে কেটিসিসি লি: এর বিশাল সম্পদ জবর দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা। দেখে মনে হয় অভিভাবকহীন এই সম্পদ। লক্ষ্মীপুর চৌমুহনীতে কেটিসিসি লি: এর কয়েকটি দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করা হলেও জমা হচ্ছে নামমাত্র। একই অবস্থা ধর্মপুর সমবায় হিমাগরের সংলগ্ন ৫ বিঘা জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। একই অবস্থা ঢুলিপাড়া চৌমুহনী সংলগ্ন কেটিসিসিলি: এর প্রায় দুই বিঘা জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে কেটিসিসি লি: এর। অথচ এই সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রায় ১৯ মাসের মতো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। পিকেএসএফ এর নামে কয়েক কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হলেও আদায় অবস্থা শূন্য। প্রতিটি শাখায় একই অবস্থা। সমবায়ীদের দাবী এখনো কেটিসিসিকে বাঁচানো সম্ভব। যদি কেটিসিসি লি: এর উপর উন্নয়নের জন্য একটি ডিপিপি তৈরী করা যায় এবং তা বার্ডের পরিচালকের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কেটিসিসিকে বাঁচাতে স্থানীয় সাংসদ বীরমুক্তিযোদ্ধা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিনকে এগিয়ে আসতে হবে বলে জানান প্রকৃত সমবায়ীরা।

কেটিসিসি এর সাবেক ৫ বারের চেয়ারম্যান ও আদর্শ সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যাপক কাজী আবুল বাশার বলেন, আক্তার হামিদ খানের প্রচেষ্টায় কুমিল্লা বার্ড প্রতিষ্ঠা ও বগুড়া বার্ড প্রতিষ্ঠা হয়। ওনার হাতের গড়া এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অভাবে বিলিনের পথে। সমবায় গুলোকে অডিট করে চাঙা না রেখে বর্তমান যারা কেটিসিসিএর দায়িত্বে আছে তারা লুটেপুটে শেষ করে দিচ্ছে। আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম তখন সাবেক সাংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরী সাহেব ও এমপি বাহার সাহেব আমাকে সহযোগিতা করেন। বার্ডের মাধ্যমে কেটিসিসিএকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা এনে দিয়ে ডিপ টিউবওয়েল করে অনেক টাকা উপার্জন করার রাস্তা তৈরী হয়েছিলো। এখন কোনো শৃঙ্খলা নেই। যে সাড়ে ৬ কোটি টাকা এনেছিলাম তার কোনো হিসাব এখন নেই। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন যে টাকা দিয়েছে ঐ টাকাও পরিশোধ করতে পারেনি। বিএডিসির টাকা ও পরিশোধ হয়নি। অথচ আগে কেটিসিসিএর মাধ্যমে দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করা হতো।

এ বিষয়ে জানতে কুমিল্লা কেটিসিসিএ লিমিটেড’র চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের সাথে একাধিকবার মুঠোফোন যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।