নবাব বাড়িতে দিনে-দুপুরে হরদম মাদকের আড্ডা

সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ ।।
প্রকাশ: ১ বছর আগে

কুমিল্লা শহরের অন্যতম নান্দনিক স্থাপনা নবাব বাড়ী । এটি শহরের প্রাচীন মুসলিম আবাসগুলির একটি।এই ঐতিহ্য সম্বলিত বাড়িটিতে এখন দিনে-দুপুরে অবাধে চলে মাদকদ্রব্য সেবন।সেখানেই বসে নিয়মিত মাদকের আড্ডা।এমনকি নারীসহ বসে জুয়ার আসর ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,নবাব বাড়ির উত্তর-পশ্চিম পাশের দেয়াল ঘেঁষে যথারীতি আস্তানা গেড়ে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন করছেন তারা।বাড়ির ভেতরের কয়েকটি কক্ষে মাদকদ্রব্যের উচ্ছিষ্টগুলো রাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে সেখানে । ফেনসিডিল, গাঁজা, মদ ও ইয়াবা সেবনের নানা উপকরণে ভর্তি। প্রতিদিন এই নবাব বাড়িতে শুরু হয় মাদকাসক্তদের এসব কর্মকান্ড এবং চলতে থাকে মধ্যরাত পর্যন্ত। শুধু মাদক নয় সেখানে সামাজিক অপরাধ সংঘটিত হয় বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বহিরাগত লোকজন গ্রুপ আকারে প্রতিদিন রাত ৭-৮টার দিকে এখানে এসে মাদকের আড্ডা বসায়। প্রায় সারা রাত চলতে থাকে এমনসব আড্ডা। লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলাও চলে এই ঐতিহ্য সম্বলিত নবাব বাড়িতে। এমনকি মাঝে মাঝে নারী নিয়েও তাদের আসতে দেখেন তিনি। এই নির্জন জায়গায় প্রতিনিয়তই ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ তারা।

আবার অনেকে বলেন,এই বাড়িটি সন্ধ্যা হলে অনেকটাই নিরব হয়ে যায়। তখন চিকা গ্রুপ সহ কয়েকটি মাদকসেবি গ্রুপ এখান আড্ডার আসর বসায়।এতে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণীদের ও ভিতরে যেতে দেখা যায়।

এ মাদকের বিষয়ে নবাব বাড়ি চৌমুহনীর সচেতন মানুষ যদি কোন প্রতিবাদ করে তবে গডফাদাররা সে সব লোকজনকে কোন না কোন ভাবে ফাঁসিয়ে দিয়ে উল্টো তাদেরকে হয়রানি করতে থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।এমনকি হত্যার ও হুমকি ধমকি দিয়ে থাকেন।

ইতিহাস ঐতিহ্য থেকে জানা যায়, কসবা শাহপুরের সৈয়দ বাড়ীর সৈয়দ জুলফিকার হায়দার এর পুত্র সৈয়দ বশরত আলী কুমিল্লা শহরের চর্থা এলাকায় এসে আবাস গড়েন। তিনিই এই ঐতিহাসিক বাড়ীটির নির্মাতা। তাঁর আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটলে ১৮৭৮ সনে তিনি এ বাড়ীর নির্মাণ করেন।

তখন এটি একতলা ছিলো। পরবর্তীতে ১৯০৮ সনে তদীয় পু্ত্র নবাব হোচ্ছাম হায়দার বাড়ীর বর্তমান অবয়বটি নির্মাণ করেন।নান্দনিক এ বাড়ীর সীমানা সারে চার একর বা বারো বিঘা। মূল বাড়ীটি একতলায় ৪৮০০ দোতালায় ৪৮০০ বর্গফুট মিলে মোট ৯৬০০ বর্গফুট।

মাদকের বিষয়ে নবাব পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের বংশধর সৈয়দ বাইজিদ হায়দার বলেন,আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী বাড়ির মাঠে আগে স্থানীয় ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করত।ইদানিংকালে কিছু লোক আমাদের মূল বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত বাড়িটিতে প্রকাশ্যে মাদক খায়।প্রশাসন যাতে মাদকের আড্ডাগুলো বন্ধ করে এই বিষয়ে আমি শীগ্রই একটি অভিযোগ দিবো।

কুমিল্লা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন ও অর্থ) আফজাল হোসেন বলেন,বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।এখানে কোতয়ালী থানা নিয়মিত টহল দিবে।