– নির্সগ মেরাজ চৌধুরী’র বই সেই আগুন সেই আলো 

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৭ মাস আগে

 

মুক্তি সাহা ঈশিতা।। 

 

“সোজা ট্রিগার চেপে ধরলো সে। পরপর দুটি বুলেট বের হলো সুনীতির হাতের ০.৩২বোরের রিভলভারটি থেকে। প্রায় একই সময় শান্তিও গুলি ছুড়লো। তাদের সামনে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্স। “

মাটিতে লুটিয়ে পড়লো বিট্রিশ সাম্রাজ্যের অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট সি জে স্টিভেন্স। আর এই যুগ যুগান্তরের বিস্ময়কর ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে এই বাংলার ত্রিপুরা জেলা তথা কুমিল্লার মাটির মাধ্যমিক পড়া দুই কিশোরী কন্যার হাতে।

 

১৪ই ডিসেম্বর ১৯৩১সাল ইতিহাস রচিত এই দুর্গম কন্যারা আজকের স্বাধীন বাংলার এক অগ্নিশিখার সূচক ছিলেন।

যাদের অকুতোভয় হৃদয় বন্দুকের বুলেট ছুঁড়েও দৌঁড়ে পালিয়ে গিয়ে নয় ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্স এর মৃত মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে পেয়েছিলো আগামীর মুক্তির আনন্দ, বিজয়ীর আনন্দ।

যাদের অত্যাচার গ্রেপ্তার, অর্থের লোভ, পরিবারের ওপর নির্যাতন কোনো কিছুতেই বিচলিত করতে পারেন নি। ফাঁসির কাঠগড়ায় উচ্চস্বরে গেয়ে উঠে

 “বন্দে মাতারাম, বিপ্লবের জয় হোক, স্বাধীনতার জয়। “

 

বলছি আমাদের কুমিল্লার ফয়জুন্নেসা স্কুলের অগ্নিকন্যা শান্তি চৌধুরী- সুনীতি দত্তের এবং বিপ্লবী প্রফুল্ল নলীনিকে নিয়ে, সমৃদ্ধ কুমিল্লার অলি-গলি প্রাঙ্গণের শত ইতিহাস নিয়ে। কুমিল্লার এই ধর্মসাগরের পশ্চিম পাড় , এই বাগিচাগাও, দ্বিগড়ম্বরি তলা, ঈশ্বর পাঠশালা, অভয়আশ্রমের মহাসড়ক সাক্ষী রয়েছে পৃথিবীর খ্যাত মানুষের আগমনকে ঘিরে রচিত এই বইটি।

হ্যাঁ, এই পথ ধরে হেঁটে গিয়েছে মহাত্মা গান্ধী, বিশ্বকবি, বিপ্লবী অখিল অখিল চন্দ্র নন্দী সহ জাগরণের পথপ্রদর্শক।

এই ময়নামতি, লালমাইয়ের লাল পাহাড়ে দীক্ষা নিয়েছেন বাংলার প্রথম নারী বিপ্লবী সংঘ৷

উনিশ শতকের বাংলার বিট্রিশ শাসনমল মুক্তির নিশান হয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা ত্রিপুরা তথা কুমিল্লা জেলার বিপ্লবীদের অবদান অনস্বীকার্য। বাংলার ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে মুদ্রিত হওয়ার শত সংগ্রামের, বলিদানের ব্যক্তিত্বের বিরাজমান ঘটেছে এই কুমিল্লায়৷ যা অচিরেই অজানা রয়ে গেছে এই প্রজন্মের নিকট।

আর সেই কালজয়ী যুগের উপাখ্যান আমাদের মাঝে তুলে ধরেন লেখক নির্সগ মেরাজ চৌধুরী

“সেই আগুন সেই আলো ” বইকে ঘিরে।

 

পাঠ প্রতিক্রিয়া :

সন ১৯২৬ ত্রিপুরা জেলার এই মহাকুমায় আর ৫টি সাধারণ পরিবারে সন্তানের মতোই বেড়ে উঠেন  শান্তি চৌধুরী- সুনীতি দত্ত এবং বিপ্লবী প্রফুল্ল নলীনি। ফয়জুন্নেসা স্কুলের মেধাবী শিক্ষার্থী প্রফুল্ল নলীনি এর মাঝে বইয়ের মাধ্যমে জাগরণের আভাস আসে অতঃপর বহু প্রচেষ্টার পর প্রথমবারের মতো নারী বিপ্লবী খাতায় নাম যুক্ত করেন এই কিশোরী। উদ্ধুদ্ধ করেন স্কুলের মেধাবী দেশপ্রেমী শিক্ষার্থীদেরকে। আর তাদের ভিড়ে উঠে আসে পরাধীন বাংলার প্রথম নারী বিপ্লবী শান্তি – সুনীতি। বইয়ের পুরো জার্নিতে উঠে এসেছে ২জন ছোট্ট বালিকা হতে বড় হয়ে উঠার এবং দেশনেত্রী ও দেশসেবিকা ডাক্তার হয়ে উঠার সাহসী সংগ্রামী লড়াইয়ের সফর। বিপ্লবী ২কিশোরী জেলে থেকে  ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেছিলেন তারা অতঃপর কলেজ সম্পূর্ণ করে কোলকাতা মেডিকেল কলেজ এর মতো বিখ্যাত বিদ্যাপীঠে এবং অপরজন হয়ে উঠে সেই সময়কার সেরা জননেত্রী।

আর তারই রেশ ধরে বিট্রিশ শাসনমল হতে বাংলার স্বাধীন সূর্যের পুরো  সফরনামা বইয়ের প্রতিটি পাতায় উঠে এসেছে।

১৯২৬সাল হতে ১৫আগস্ট ১৯৪৭সালের পর্যন্ত আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার সারচিত্র এঁকেছেন। সমগ্র ভারতবর্ষ তথা বিট্রিশ রাজ থেকে মুক্ত করে তামলূক ও কাথিকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করে মুক্তির স্বাদ আস্বাদন করেন বাঙালী।

 

সমৃদ্ধ বইটিতে উঠে এসেছে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত, বাংলার লোলিত মোহন বর্মণ, মহান নারী শহীদ বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মাতঙ্গিনী হাজরার মতো মহান মানবের কর্ম বিশেষ।

শান্তি, সুনীতি এবং প্রফুল্ল এই নামগুলোতে কি বিশাল শক্তি রয়েছে তা কোনো রিভিউতে কখনো বুঝিয়ে তুলে ধরা সম্ভব নয়। কালের আর্বতনে দেশপ্রেম কতটা গভীর, দৃঢ় এবং আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলে একজন মানুষকে এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ কুমিল্লার প্রেক্ষিতে আর কিছু কি হতে পারে?

 

– সর্তীথ প্রকাশনা

– ঐতিহাসিক থ্রিলার (জনরা)