প্রতিপক্ষকে বিতর্কিত করতে হামলার ‘নাটক সাজায়’ সারোয়ার, গ্রেপ্তার ৫

কুমিল্লায় মনোনয়ন কিনে বের হতেই কথিত হামলা
আবদুর রহমান।।
প্রকাশ: ৫ মাস আগে

কুমিল্লায় নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন ফরম কিনে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছেন বলে গোলাম সারোয়ার মজুমদার নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ তোলেন। এরপর কথিত ওই হামলার ঘটনার ১২ সেকেন্ডের একটি ভিডিওক্লিপ তিনি নিজেই ফেসবুকে আপলোড করলে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে কথিত ওই হামলাকারীদের ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদেরকে গ্রেপ্তারের পর জানা গেছে- কথিত ওই হামলার ঘটনাটি গোলাম সারোয়ার মজুমদার নিজেই সাজিয়েছেন। পুরো ঘটনাটিই ছিলো নাটক।
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ বলছে- নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে বিতর্কিত করতে এমন নাটক সাজিয়েছেন গোলাম সারোয়ার। আর কথিত হামলাকারীরা ছিলো সকলেই ভাড়াটিয়া। ঘটনার আগে তাদের সঙ্গে বৈঠক করে হামলার সময় কী এবং কার কার নাম বলতে হবে- সেটিও শিখিয়ে দেন গোলাম সারোয়ার।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার মো.আব্দুল মান্নান। এ সময় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) খন্দকার আশফাকুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো.কামরান হোসেন, জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্র্তা (ওসি) রাজেস বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কুমিল্লা নগরীর ছোটরা মফিজাবাদ কলোনী এলাকার মো.সুমন, মো.সবির, মো.সবুজ, ইকবাল হোসেন ও মাসুদ রানা। পরিকল্পনাকারী সারোয়ার ও কথিত হামলাকারীরা মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি বলে জানা গেছে।
হামলার নাটক সাজানো সারোয়ার জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার ভাউপুর গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক যুবলীগ নেতা। সারোয়ার উপজেলার সরসপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লা জেলা নির্বাচন কার্যালয় সংলগ্ন এলাকায় তাঁর ওপর কথিত ওই হামলার ঘটনা ঘটে। সারোয়ার আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান বলে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে ঘটনার পর জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার মো.আব্দুল মান্নান বলেন, ঘটনার দুইদিন আগে সারোয়ার মফিজাবাদ কলোনীতে কথিত হামলাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে পুরো নাটকটি সাজায়। নাটকটা ছিলো এমন- সারোয়ার জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যাবে মনোনয়ন ফরম তুলতে; সেখান থেকে ফেরার পথে তার ওপর হামলা হবে এবং কয়েকজন ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে মনোনয়ন ফরম ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। তিনি হামলাকারীদের এ-ও বলে দেন যেন- তাকে আস্তে মারা হয়। ঘটনার ভিডিও করার জন্য মনোহরগঞ্জ থেকে সঙ্গে করে দুইজন নিয়ে আসেন তিনি। গ্রেপ্তার ৫ জনই একই বক্তব্য দিয়েছে। ঘটনার পরিকল্পনা যেখানে হয়েছে- সেই চা দোকানীকে আমরা পেয়েছি, তিনি ঘটনার সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়েছেন।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, সারোয়ারের মূল উদ্দেশ্য ছিলো ওই আসনে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত সকলকে বিতর্কিত করা। আমরা গ্রেপ্তারকৃতদের আরো বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করছি। আর সারোয়ারকে আটকের চেষ্টা চলছে। তাকে আটক করার পর জানতে পারবো পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করার জন্য এমন ঘটনা করেছে কি-না বা তার মূল উদ্দেশ্য কী? এজন্য আমরা ঘটনাটি ভালোভাবে তদন্ত করে দেখছি। এ ঘটনায় কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ৫ ভাড়াটিয়া হামলাকারী গ্রেপ্তারের পর থেকে গোলাম সারোয়ার মজুমদার এলাকা থেকে গা-ঢাকায় দিয়েছেন। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। শুকবার রাত থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।