মাননীয় মন্ত্রী, এটা রাজনীতির সংস্কৃতি হতে পারে না -শাহাজাদা এমরান

সময়ের কথা
শাহাজাদা এমরান
প্রকাশ: ১০ মাস আগে

গণতন্ত্রের মূল সৌন্দর্য্য হচ্ছে মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা।কোন রকম বাধা বিপত্তি বা নূন্যতম প্রতিবন্ধকতা ছাড়া নিজের স্বাধীন মতকে সবার সামনে উপস্থাপন করাই হচ্ছে বাক্ স্বাধীনতা। কথা বলার স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা, নিজের ভোট নিজে দেওয়ার স্বাধীনতার চেয়ে বড় গণতন্ত্র আর কোন কিছুতেই নেই। এই গণতন্ত্র যখন হুমকির মুখে পড়ে তখন খোদ রাষ্ট্রই তার অস্তিত্ব নিয়ে নানা সংকটের মধ্যে পড়ে। যেই সংকট একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও স্বকীয় রাষ্ট্রের জন্য কোন ভাবেই শুভ কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। এই কল্যাণ সব সময় আমাদের দেশে সমান্তরাল গতিতে চলে না বলেই স্বাধীনতা অর্জনের ৫২ বছর পরেও আজও আমাদের ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করতে হয়। প্রতিনিয়ত নছিহত শুনতে হয় বিদেশী মোড়লদের কাছে। আমাদের পরে স্বাধীনতা অর্জন করেও অনেক রাষ্ট্র আজ আর্থ সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যেভাবে এগিয়েছে আমরা কিন্তু এখনো সেভাবে আগাইতে পারি নাই। কেন পারি নাই সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে হয়তো আমাদেরকে অতিবাহিত করতে হতে পারে আরো ৫২ বছর।

গত ১৪ জুলাই রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পদযাত্রা ছিল নোয়াখালিতে। এই পদযাত্রায় অংশ নিতে কুমিল্লা উত্তরের মুরাদনগর উপজেলা থেকে প্রায় ৬০টি গাড়ি নিয়ে সেখানকার বিএনপির নেতাকর্মীরা রওয়ানা দেয়। প্রায় দুপুর দেড়টায় পদযাত্রায় অংশ নিতে যাওয়া মুরাদনগর উপজেলার বিএনপির গাড়ি বহরটি যখন লাকসাম শহর অতিক্রম করছিল ঠিক তখনি স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ অতর্কিত আক্রমণ করে বলে অভিযোগ করেছেন মুরাদনগর ও তিতাস উপজেলার বিএনপি নেতৃবৃন্দ।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, লাকসাম উত্তর বাইপাস সড়কের উত্তর মোড় দিয়ে গাড়ি বহরটি যাওয়ার সময় প্রথম ৫টি গাড়ি যাওয়ার পরেই শুরু হয় গাড়ি আটকিয়ে এলোপাতাড়িভাবে ভাংচুর ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর অমানুসিক হামলা ও নির্যাতন। এতে প্রায় ৩৫টি গাড়ি ভাংচুর ও ৬০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। মাসুদ নামে বিএনপির এক কর্মী কুমিল্লা নগরীর একটি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, আমরা তাদের কাছে জীবন ভিক্ষা চেয়েছি, বাবা ডেকেছি এমনকি মসজিদে গিয়েও রক্ষা পেতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। মসজিদের গেইটের সামনে আমাদের কুপিয়েছে। মসজিদের বারান্দা রক্তে লাল হয়েছে।

আমি কুমিল্লা ৮ সংসদীয় আসনের (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) মাননীয় সংসদ সদস্য ও বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী জনাব তাজুল ইসলাম মহোদয়ের কাছে বিনয়ের সাথে জানতে চাই, মাননীয় মন্ত্রী, নোয়াখালীতে আয়োজিত বিএনপির পদযাত্রায় যাওয়া মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা কি লাকসামে অর্থাৎ আপনার নির্বাচনী এলাকায় কোন রাজনীতি করতে গিয়েছিল কিংবা তারা কি সেখানে আপনার বিরুদ্ধে কোন স্লোগান দিয়েছিল ? নিশ্চয়ই আশা করি উত্তরে বলবেন ‘না’। তারা তো আপনার নির্বাচনী এলাকার যাত্রী মাত্র। যেহেতু নোয়াখালী যাওয়া লাকসাম দিয়ে সহজ তাই তারা এই বাইপাস পথটি বেছে নিয়েছে। তারা তো আপনার নির্বাচনী এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীও না। আপনার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ারও তো তাদের ক্ষমতা নেই। তাহলে কেন আপনার নেতাকর্মীরা তাদের উপর এমন নির্দয় আচরণ করল ? এটা কি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য হলো। এটা তো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হতে পারে না মাননীয় মন্ত্রী।

মাননীয় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম মহোদয়, আমি নিশ্চিত ভাবে বিশ্বাস করি কিংবা বিশ্বাস করতে চাই যে, লাকসাম দিয়ে নোয়াখালীর পদযাত্রায় অংশ নেয়া মুরাদনগরের বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলা করতে আপনি নির্দেশ দেন নি কারণ, গণমাধ্যমে আপনার বিভিন্ন টক-শো গুলো আমি মনোযোগ দিয়ে শুনি। আপনার সাবলীল ভাষায় বলা কথাগুলো আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত শ্রবণ করি। বিশেষ করে আপনি যখন গণতন্ত্রের অপার সৌন্দর্য নিয়ে নানা সময় কথা বলেন আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু আপনার বিভিন্ন সময় বলা কথা গুলোর সাথে গত ১৪ জুলাই শুক্রবার দুপুরে আপনার নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনাটির কোন মিল খুঁজে পাইনা।
মাননীয় মন্ত্রী আপনার সমালোচকরা বলে থাকেন, প্রায় গত ১৫ বছরে লাকসাম, মনোহরগঞ্জের ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার থেকে শুরু করে উপজেলা ও পৌরসভার নির্বাচন পর্যন্ত অধিকাংশেরও বেশি আসন গুলোতে কোন নির্বাচনই হয়নি। ওয়ার্ড থেকে উপজেলা প্রায় সব স্থানেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে আপনার নেতাকর্মীরা। যদিও গত প্রায় ৫ বছর ধরে স্থানীয় সরকারের মন্ত্রী হিসেবে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার জন্য আপনি দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া ছাড়া স্থানীয় সরকার কিভাবে শক্তিশালী হবে তা হয়তো আমার মত অধম বুঝতে কিছুটা সমস্যা আছে। আপনার দুই উপজেলায় ভিন্ন মতের বিশেষ করে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে কঠোর হস্তে দমিয়ে রাখার কথাও আমার আজকের আলোচনার বিষয় বস্তু নয়। আমার আলোচনাটি শুধু একটি স্থানেই আমি সীমাবদ্ধ রাখতে চাই, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়। সেটি হলো, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দড়জায় কড়া নাড়ছে। তামাম পৃথিবী তাকিয়ে রয়েছে আমাদের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে। আপনারা স্ট্রংলি বলছেন, আপনাদের অধীনেই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্ভব এবং হবে। যদিও দেশের অধিকাংশেরও বেশী বিরোধী দল বলছে আওয়ামীলীগের অধীনে তারা কোন নির্বাচনে যাবে না। ইতিমধ্যে তারা আনুষ্ঠানিক ভাবে এক দফার আন্দোলন ঘোষনা করেছে। দেশের এই যখন অবস্থা ঠিক এই মুহুর্তে আপনার মত একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর এলাকায় এই মুহুর্তে ভিন্ন সংসদীয় এলাকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর এমন বর্বর ও ন্যাক্কারজনক হামলা না হলেই কি চলতো না। বিরোধীদলতো এখন আরো বেশী সুযোগ পাবে বলতে যে, যারা আমাদের নূন্যতম আন্দোলন করতে সুযোগ দিতে পারে না , হামলা করে তারা আাবার কিভাবে নির্বাচনের সময় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দিবে।

মাননীয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মহোদয়, আজকের সময়ের কড়চাটি শেষ করতে চাই আপনাকে একটি অনুরোধ করে। মুরাদনগর উপজেলার বিএনপির নেতাকর্মীরা সে দিন নোয়াখালী যাওয়ার পথে লাকসামের যাত্রী ছিল , অতিথি ছিল। এই যাত্রী কিংবা অতিথিদের যারা গাড়ি থেকে নামিয়ে নামিয়ে মেরেছে, আক্রমণ করেছে তারা কোন রাজনৈতিক কর্মী হতে পারে না। তারা সন্ত্রাসী। এই সন্ত্রাসীদের কোন দল বা মত থাকতে পারে না। আমি এই লেখার উপরে বলছি, আমি বিশ্বাস করতে চাই যে , এই হামলার বিষয়ে আপনি জানতেন না। যেহেতু আপনাকে বলে কয়ে হামলা হয়নি এবং এখন যেহেতু জেনেছেন এবং মিডিয়ার মাধ্যমে সারা দেশ জেনেছে, তাই আপনি হামলাকারী সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনুন। তাহলে মানুষ মনে করবে , সত্যিই আপনি আগে জানতেন না এবং আপনি কখনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে আশ্রয় প্রশয় দেন না।
কুমিল্লার মানুষ আপনার এই ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় রইলো।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক,বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কুমিল্লা জেলা শাখা।