যানজট থেকে মুক্তি মিলছে না কুমিল্লা নগরবাসীর

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

কুমিল্লা নগরীকে যানজট মুক্ত করার জন্য কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করলেও যানজট সমস্যা এখানো রয়েছে প্রকোট আকারে। বিশেষ করে ঈদকে সামনে রেখে আরো বেড়েছে। নগরীর মানুষ দিনে বা সন্ধ্যায় কোথাও যেতে হলে কষ্ট করে যেতে হয়। তার মাঝে পবিত্র রমজান মাসের এ সময় প্রকোট রোদের উত্তাপ থাকায় যানজটের কারণে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আর কিছুদিন পরেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। সেই উপলক্ষে অনেকে নগরীতে এসে করছেন ঈদের কেনাকাটা। এই কেনাকাটা করতে এসেও যানজট থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
আবার নগরী পার হতে হলে বা একপাশ থেকে অন্যপাশে যেতে হলে অসহ্যরকম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে চলাচলকারীদের। সময়, অর্থ, কর্মঘণ্টার এমন অপচয় বাড়লেও মুক্তি মিলছে না যানজট থেকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি আটকে থেকে অসহায় পাখির মতো ছটফট করা কুমিল্লার নাগরিকদের নিত্যদিনের সঙ্গীতে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শাসনগাছা থেকে কান্দিরপাড় হয়ে রাজগঞ্জ-চকবাজার রোড, কান্দিরপাড় থেকে টমছমব্রিজ হয়ে পদুয়ার বাজার, টমছমব্রিজ বা সালাউদ্দিন হোটেল হতে মেডিক্যাল কলেজ তথা যেদিকেই কেউ যাক, ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে থাকে। সকল যানজটের মধ্যেই নগরীর চকবাজারের মদিনা বাস রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী উঠানামা করায় যানজট আরও বেশি হয়ে থাকে। রাস্তার মধ্যে যত অলিগলি আছে প্রায় সবকটিতে যানজটের জ্বালা পোহাতেই হচ্ছে মানুষকে।
লালামাই উপজেলার বাকই উত্তর এলাকার বাসিন্দা সোলেইমান ঈদের কেনাকাটা করতে এসে বলেন, আমি বিশ্বরোড থেকে কান্দিরপাড় আসতে সময় লেগেছে ১ ঘণ্টা। এখনও মার্কেটে ঢুকতে পারিনি। যানজট যদি এভাবে লেগে থাকে তাহলে আর কেনাকাটা করতে হবে না। যানজটের অস্থিরতায় মানুষ অসুস্থ হয়ে যাবে।
নগরীর কান্দিরপাড়ের বাসিন্দা শাহিনা আক্তার বলেন, আমার মেয়ে মহিলা কলেজে পড়ে। কলেজের পাশেই এখন প্রাইভেট পড়ে। অন্যান্য দিনে ক্লাস শুরুর ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট আগে কলেজে যেতে বের হতো। আর এখন ১ ঘণ্টা আগে বের হতে হয়। যানজটের কারনে মেয়েকে কলেজে ও প্রাইভেটে আসা-যাওয়াটা অনেকটাই ভোগান্তি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নগরীর এক ব্যবসায়ী বলেন, কুমিল্লা নগরে বেড়েছে পরিবহনের সংখ্যা। এর ফলে মানুষের কর্মঘণ্টা কমার পাশাপাশি বাড়ছে মানসিক চাপ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দেশের অনেক কিছুই ডিজিটালাইজ হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ অনলাইনে মামলা দিচ্ছে। কিন্তু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সেই আগের মতোই রয়ে গেছে। এখনো হাতের ইশারায় সড়কগুলোতে সব ধরণের বাহন চলছে এবং দিন দিন বাড়ছে যানজট।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রাজন কুমার বলেন, অফিসের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে আমরা কাজ করছি। যেসব এলাকায় স্কুল রয়েছে, সেখানে খুব সকাল থেকেই ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের আসা-যাওয়ার কারণে যে সব সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয় সেসব এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা অন্যান্য সময়ের থেকে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা কিছুটা বাড়িয়েছি যাতে সাধারণ মানুষ যানজটে কষ্ট না পায়।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড.সফিকুল ইসলাম বলেন, যদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, কান্দিরপাড় কেন্দ্র করে দুই/তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো গাড়ি ঢুকবে না। সবাই হাঁটবে। ভিআইপি সিআইপি সবাই। শহর থেকে বের হতে হলে বাইপাস রোডে যেতে হবে বা হেঁটে বা সাইকেলে শাসনগাছা, বা পদুয়ার বাজার বা চকবাজার রোড ধরতে হবে। নগরীর কেন্দ্রে কোনো গাড়ি বা রিকশা বা টমটম কিছু চলবে না। এমনকি ভিআইপি সিআইপিও গাড়ি নিয়ে আসবে না। আর ব্যবসায়িক মালামাল ঢুকবে কেবল গভীর রাতে। তাহলেই কুমিল্লা নগরীতে যানজট থাকবে না। এছাড়া পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। কারণ মূল নগরীর রাস্তা সরু। চাইলেও এ রাস্তাগুলো এখন আর বড় করা যাবে না। যেহেতু নগরী ধীরে ধীরে শত বছর ধরে বেড়েছে, তা একদিনে সব ভেঙে করা যাবে না। তবে মাস্টার প্ল্যান মোতাবেক নতুন এলাকাগুলো পরিকল্পনা মাফিক করা যেতে পারে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাত বলেন, যানজট নিরসনে আমরা কাজ করছি। গত মাসেও আমরা কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলাম। সে সিদ্ধান্ত গুলো এখন প্রয়োগ করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই নগরীর মানুষ কিছুটা হলেও যানজট থেকে পরিত্রাণ পাবে। এই যানজট অল্প দিনে শেষ করা যাবে না। কিছুটা সময়ের প্রয়োজন আছে। আর ব্যাটারি ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার জন্য আমরা কিছু নিয়মনীতি করছি।