র‍্যাব সংস্কারের প্রশ্নটি বিভাগীয় নয়, রাজনৈতিক

দে লো য়া র জা হি দ
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

র‍্যাবের নবনিযুক্ত মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন র‍্যাব সংস্কারের কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন না।” সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে দেশটির অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। জবাবদিহিতা ও সংস্কার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে”।…র‌্যাবের ডিজি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বলবো, র‍্যাব সংস্কারের কোনো প্রশ্নই দেখি না। আমরা এমন কোনো কাজ করছি না যে র‍্যাবকে সংস্কার করতে হবে। আমাদের আগে থেকে যে বিধিবিধান আছে, সেই বিধিবিধান অনুসারে আমরা কাজ করছি। আমরা আইনের বাইরে কোনো কাজ করি না।…যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আপনার ওপর কতটুকু প্রভাব ফেলবে, চাপ কতটুকু থাকবে বলে মনে করেন জানতে চাইলে খুরশীদ বলেন, একটা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা সরকারিভাবে মোকাবিলা করা হচ্ছে। তারা যেসব বিষয় আমাদের কাছে চেয়েছে, ইতোমধ্যে আমরা সেগুলোর জবাব দিয়েছি। জবাব দেওয়ার পরে তারা নতুন করে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ পায়নি। কারণ, আপনি বললেন এতগুলো লোক আমার নেই, উধাও হয়েছে কিন্তু আমাদের তো বলতে হবে সেই লোকগুলো কারা? সেগুলো বলা হয়েছে, আমরা সেগুলোর খোঁজ দিয়েছি, কে, কোথায়, কী অবস্থায় আছে। আমি মনে করি না, এটা বড় কোনো চ্যালেঞ্জ সরকার বা আমাদের জন্য (দৈনিকশিক্ষা,অক্টোবর ১).

“মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ও বাংলাদেশের ভারসাম্যের কূটনীতি” শীর্ষক একটি নিবন্ধ (যুগান্তর, ১৮ এপ্রিল ২০২২) এর প্রেক্ষাপট ছিলো ১৩ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী “২০২১ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিস” এর প্রকাশ। যাতে বলা হয়েছে যে, তাদের পররাষ্ট্র দফতর শ্রমিকদের অধিকার, পুলিশ এবং নিরাপত্তা সমস্যা, নারীদের ইস্যু এবং অন্যান্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে “তথ্য-ভিত্তিক” নথি তৈরি করেছে। একশত সত্তর মিলিয়নেরও বেশি জনসংখ্যার একটি দেশ বাংলাদেশ, এখানে মানবাধিকার মানসম্মত শর্ত নিশ্চিত করে গণমুখী উন্নয়ন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প ব্যবস্থাপত্র নেই। মানবাধিকারের বিকল্প শুধুই মানবাধিকার।…রিপোর্টটি প্রকাশ নিয়ে দুদেশের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিলো উষ্ণতা যা ওই সংবাদ প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে। “বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অত্যন্ত তীক্ষ্ণভাবে মার্কিন মানবাধিকার কান্ট্রি রিপোর্টের অভিযোগগুলোকে অস্বীকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জবাবদিহিতা সম্পর্কে সরকারের অবস্থান ব্যক্ত করেছে। ঢাকার দাবি মানবাধিকার রক্ষার জন্য জাতিসংঘ এবং মার্কিন সুপারিশগুলোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে যে, এ প্রতিবেদনটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জবাবদিহিতা সম্পর্কে বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবস্থাকে “অবজ্ঞা” করেছে।…শুধু তাই নয়, প্রতিবেদন প্রকাশকারীদের সরাসরি অভিযুক্ত করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে- প্রতিবেদনটি সমাজ ও সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য অনাচারের সমাজ তৈরি করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।(যুগান্তর)

একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার অনুশীলন, প্রক্রিয়া ও সংস্কারের মধ্যদিয়ে যেতে হয়। তা উন্নত, অনুন্নত, স্বল্পোন্নত যে কোনো পর্যায়ের দেশই হোক না কেন। উদাহরণ স্বরূপ আন্তর্জাতিক আইনে কানাডার অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের প্রতিফলন পর্যালোচনায় দেখা যায় কানাডিয়ান আইন বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করছেন যে কানাডা একটি মধ্যম শক্তি হিসাবে এখন কোথায় দাঁড়িয়েছে,এবং কীভাবে এটি বিশ্বকে রূপ দিয়েছে আইনের শাসন এবং এটি সংরক্ষণ ও শক্তিশালী করতে কানাডাকে কোথায় যেতে হবে। বিষয়টি বিশেষভাবে এখানে প্রাসঙ্গিক যখন এমনকি সবচেয়ে শক্তিশালী দেশগুলিও আন্তর্জাতিক আইনকে তাদের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ এজেন্ডার জন্য হুমকি হিসাবে দেখে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার, মানবিক আইন, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক আইন, চুক্তি আইন, আদিবাসী আইন এবং আইপি আইনের উপর বিরতিহীনভাবে আমাদের কাজ করতে হয় এবং হবে.

বিশ্ব পরিমণ্ডলে ১৯০০-এর দশক থেকে প্রগতিবাদী সংস্কারকরা চেয়েছিলেন সমাজে অনেক পরিবর্তন। তখন প্রগতিশীল আন্দোলনের চারটি প্রধান লক্ষ্য ছিল (১) সামাজিক কল্যাণ রক্ষা করা, (২) নৈতিক উন্নতি (৩) অর্থনৈতিক সংস্কার, এবং (৪) লালন পালন করার দক্ষতা. সংস্কার করার চেষ্টা করেছিলেন জীবনের সমস্যাগুলোকে সহজ ও কল্যাণকর করা ।

বাংলাদেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সাথে কানাডার পাবলিক সেফটি এজেন্সি গুলোর তুলনামূলক আলোচনা করার সুযোগ সীমিত। কানাডিয়ানদের ন্যায্য এবং নিরাপদে আচরণ নিশ্চিত করার বাধ্যবাদকতা রয়েছে। তারপরও কৃষ্ণাঙ্গ এবং আদিবাসীদের RCMP এর সাথে মারাত্মক সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে । RCMP এর সীমিত বাহ্যিক তদারকির হিসাব প্রকাশ করা হয়েছিল ২০২০ সালের একটি প্রতিবেদনে, সেখানে এমন একটি সংস্কৃতি রয়েছে যা তার নিজস্ব পদের মধ্যে হয়রানির অনুমতি দেয়। তারপরও ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসাবে, একটি নীতিবাক্য “Maintiens le droit” মানবাধিকার সুরক্ষার সর্বোচ্চ মান ধরে রাখতে এবং তা নিশ্চিত করতে হয়। এটি সমস্ত কানাডিয়ানকে রক্ষা ও সম্মান করে। এর অর্থ হল শক্তিশালী বাহ্যিক তত্ত্বাবধানকে নিশ্চিত করা এবং নিজস্ব পদের মধ্যে ও হয়রানি দূর করতে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন আনা। দেশের পুনঃনির্বাচিত উদারপন্থী সরকারের একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা ছিল RCMP-এর সাতটি বিষয়ের উপর পদক্ষেপের সাথে সাথে প্রয়োজনীয় সংস্কার: সম্পূর্ণ তত্ত্বাবধানের জন্য পুলিশ পরিষেবাগুলির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে বর্তমান ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা বোর্ডকে উন্নত করা, বেসামরিক পর্যালোচনা ও অভিযোগ কমিশনের সুপারিশগুলি মেনে চলা, বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাগুলির পর্যাপ্ততা যাচাই এবং নিষেধাজ্ঞাগুলি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে কিনা তা পর্যালোচনা, নিষেধাজ্ঞা এবং শৃঙ্খলা ব্যবস্থার একটি বাহ্যিক পর্যালোচনাকে সমর্থন করা,
ঘাড়ের সংযম ব্যবহার করা নিষিদ্ধ, ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য টিয়ার গ্যাস বা রাবার বুলেট ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, অভিযোগ পর্যালোচনা করার সময় স্বার্থের কোনো দ্বন্দ্ব না থাকতে পারে তা নিশ্চিত করা এবং প্রশিক্ষণের ফলাফল অফিসার এবং কানাডিয়ান উভয়ের জন্যই সম্ভাব্য নিরাপদ ফলাফল নিশ্চিত করতে বর্তমানে যে ডিসকেলেশন প্রশিক্ষণ রয়েছে এর সম্পূর্ণ ও বাহ্যিক পর্যালোচনা নিশ্চিত করা ।

বাংলাদেশে র‍্যাব সংস্কারের প্রশ্নটিকে কোনোভাবেই নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে নয় বরং বৈশ্বিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত। বাংলাদেশ মানবাধিকার অনুশীলন, প্রক্রিয়াকরণ ও সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল ও দায়বদ্ধ।

[লেখক : বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার, সভাপতি, বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক, কানাডা নিবাসী]