হোসেনপুরের চ্যাপা-শুঁটকির কদর বেড়েছে বিদেশেও

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১০ মাস আগে

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের মোখরোচক চ্যাপা-শুঁটকির কদর এখন দেশে-বিদেশে বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ঈদের ছুটি শেষে অনেকেই এসব চ্যাপা-শুঁটকি সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ কর্মস্থল, বাসাবাড়ি কিংবা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশীয় পুঁটি মাছ দিয়ে তৈরি করা হয় এসব চ্যাপা-শুঁটকি। এটি এমনই এক মুখরোচক খাবার যা, যুগ যুগ ধরে বাঙালির রসনাবিলাসে অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাছ, মাংস কিংবা অন্য যেকোনো সুস্বাদু খাবারই থাকুক না কেন, সবার কাছে চ্যাপা-শুঁটকির মজাই যেন আলাদা। তাই শৌখিন ভোজনরসিকদের কাছে এ শুঁটকির কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে।

জানা যায়, হোসেনপুর উপজেলার নগর আড়াইবাড়িয়া ও নতুন বাজারের চ্যাপার বৈশিষ্ট্য অনেকটাই আলাদা। এখানকার চ্যাপা শুঁটকির নাম শুনলেই যে কারো জিভে জল এসে পড়ে। বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসব ও পার্বণে পান্তা ভাতের সঙ্গে চ্যাপার ভর্তা মিশিয়ে খাওয়ার স্বাদই যেন অন্যরকম। ফলে কিশোরগঞ্জ তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে এ চ্যাপা-শুঁটকি অতি জনপ্রিয় খাবারের একটিতে পরিণত হয়েছে। অথচ একসময় এ শুঁটকি শুধু গরিবের খাবার হিসেবে পরিচিত ছিল।

বিক্রেতাদের ভাষ্য মতে, এখন শুধু হোসেনপুরেই নয়, সারাদেশেই এই শুঁটকির কদর বেড়েছে। তাছাড়াও সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশ থেকে প্রবাসীরা ছুটিতে বাড়ি এসে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন এই সুস্বাদু শুঁটকি।

হোসেনপুর পৌর এলাকার স্বনামধন্য বাবুর্চি মো. আলাল মিয়া ও রুবেল মিয়া জানান, চ্যাপা-শুঁটকি এখন আর গরিবের খাবার নয়, বড় বড় অনুষ্ঠানেও নানা আইটেমে অতিথিদের খাওয়ানো হয়।

ভোজনরসিকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে চ্যাপাভর্তা। এটি শুকনা মরিচ বা কাঁচা মরিচ ও রসুনের সঙ্গে পিষে তৈরি করা হয়। আগে শুকনো লালমরিচ দিয়ে চ্যাপার ভর্তা তৈরি করতো বলে এক সময় এ অঞ্চলে এ চ্যাপার ভর্তাকে লাল মোরগের ভর্তা বলেও ডাকা হতো।

স্থানীয় চ্যাপা তৈরির কারিগর সাদেক মিয়া জানান, হোসেনপুরের চ্যাপা-শুঁটকির প্রধান উপকরণ হলো দেশীয় পুঁটিমাছ। যা কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল ছাড়াও পার্শ্ববর্তী সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা থেকে সংগ্রহ করা হয়। পুঁটি মাছ রোদে শুকিয়ে মাটির বড় বড় মটকায় ভরে জাগ দিয়ে চার থেকে পাঁচ মাস রেখে দেওয়া হয়। তার আগে চ্যাপা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় পুঁটি মাছের তেল। মূলত: পুঁটি মাছের পেট কেটে যে নাড়িভুঁড়ি বের করা হয়, তা আগুনে তাপ দিয়ে তৈরি করা হয় ঐ তেল। এ চ্যাপা তৈরির পর বিভিন্ন হাটবাজারে পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করা হয়।

এ ব্যাপারে হোসেনপুর বাজারের চ্যাপা-শুঁটকি ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া জানান, সারাদেশসহ বিদেশেও এখানকার চ্যাপা অর্ডারে বিক্রি করা হচ্ছে। অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, একটি বড় মটকায় ৩০ থেকে ৪০ কেজি চ্যাপা ধরে। প্রকারভেদে এক মণ চ্যাপা পাইকারী ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৩৫-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ৫০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন খুচরা ২০-২৫ হাজার টাকার এ শুঁটকি বিক্রি করে থাকেন বলেও জানান তিনি।