কুমিল্লায় ট্রেনের ৯ বগি লাইনচ্যুত , আহত ৩০ ৭ ঘন্টা পর উদ্ধার কাজ শুরু , তদন্ত কমিটি গঠন

# লাইন স্বাভাবিক হতে সকাল হবে
শাহাজাদা এমরান ।।
প্রকাশ: ১ মাস আগে

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের তেজের বাজার সংলগ্ন এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে ১৮টি বগি আলাদা হয়ে ৯টি লাইন থেকে ছিটকে পড়ে যায়। ওই রেল পথের তেজের বাজার এলাকার আপ লাইনের ২০৮ নং ব্রীজের কাঠের স্লিপার তীব্র গরমের কারণে ভেঙ্গে যাওয়ায় স্বজোরে ধাক্কা লেগে ট্রেনের ইঞ্জিনের সাথে থাকা লক ভেঙ্গে ইঞ্জিন থেকে বগি গুলো আলাদা হয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান স্থানীয়রা।

রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় আপ লাইনের ৩শ’ মিটার লাইন স্লিপার থেকে খুলে রেলপথ থেকে অন্তত ১০০মিটার দূরে গিয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ৩০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে পাঁচ জনের অবস্থা গুরুতর। রেললাইনের আশেপাশের অনেকের বাড়ি ঘর ভেঙ্গে যায়। প্রাথমিকভাবে ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে থাকা লক ভেঙে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন নাঙ্গলকোট রেল স্টেশন মাস্টার জামাল হোসেন।
এ ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান কুমিল্লা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার। দূর্ঘটনার ৭ ঘন্টা পর উদ্ধার কাজ শুরু হয়। বিজয় এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ায় চট্টগ্রামের সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ( রাত পোনে ৯টায়) ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি।

চট্টগ্রামস্থ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাত জানান, বিজয় এক্সপ্রেসের নয় বগি লাইনচ্যুত হওয়ার পরেই আমরা চট্টগ্রাম থেকে উদ্ধারকারী ইঞ্জিন ঘটনাস্থলের রাত ৭.৩০ মিনিটে নিয়ে এসেছি। আমাদের কাজ চললাম রয়েছে,আগামীকাল (সোমবার) ভোর ৫টায় বগিগুলো উদ্ধারের কাজ সম্পন্ন হতে পারে। তবে এ বগিগুলো উদ্বারের পর এ রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে আনুমানিক সকাল হবে।

রবিবার রাত ৮ টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় জেলার নাঙ্গলকোটের হাসানপুরে ট্রেনের বগিগুলো অন্ধকারের মাঝে লাইট জ্বালিয়ে উদ্ধার কাজ করছেন শতাধিক রেল শ্রমিক। তারা আশা করছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধার কাজ শেষ করতে পারবে।

নাঙ্গলকোট রেলস্টেশন মাস্টার জামাল হোসেন বলেন, দুপুর দেড়টার দিকে নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী স্টেশনের মধ্যবর্তী তেজের বাজার সংলগ্ন স্থানে জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে এ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এ দিকে, বিজয় এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ার পাঁচ ঘণ্টা পর উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। লাকসাম রেলওয়ে থানার ওসি মুরাদ উল্লাহ বাহার রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় বলেন, “মাত্রই উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম ও আখাউড়া থেকে দুটি উদ্ধারকারী ট্রেন এসে কাজ শুরু করেছে।

“প্রথমে একটি লাইন ক্লিয়ার করার চেষ্টা করা হবে। তাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে ট্রেন চলাচল শুরু করা যাবে। কিন্তু এতে কত সময় লাগবে তা এখনি বলা যাচ্ছে না”, বলেন ওসি মুরাদ।

এ ঘটনায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চাঁদপুরগামী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ে কুমিল্লার ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার।

তিনি জানান, নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে বিজয় এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসে। চৌদ্দগ্রামের গুণবতী স্টেশন পার হয়ে নাঙ্গলকোটের হাসানপুর স্টেশনে প্রবেশের সময় আউটারে ট্রেনটির ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়। হঠাৎ গরমের কারণে এমন হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। ট্রেনটি উদ্ধারে লাকসাম থেকে আরেকটি ট্রেন ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চিওড়া তেজের বাজারের দক্ষিণ পাশে দুই লাইন জুড়ে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে আছে। এর মধ্যে একটি বগি ছিটকে গিয়ে রেলপথ সংলগ্ন চিওড়া গ্রামের হতদরিদ্র বৃদ্ধ চাঁন মিয়ার ঘরের উপর গিয়ে পড়ে, ঘরটি তছনছ হয়ে যায়। এসময় চাঁন মিয়া গুরুতর আহত হলেও তিনি প্রাণে রক্ষা পায়। আহত চাঁন মিয়াকে পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
আহত ট্রেনযাত্রী কিশোরগঞ্জের মিরাজ হোসেন বলেন, ব্রীজের উপর উঠার পর ট্রেন বিকট শব্দ করে বগি গুলো ছিটকে পড়ে যায়। এসময় আমি-সহ অনেকেই আহত হয়েছে।

লাকসাম রেলওয়ে থানা অফিসার ইনচার্জ মুরাদ উল্লাহ বাহার বলেন, দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হননি। কয়েকজন আহত হয়েছে বলে শুনেছি, তবে আহতদেরকে আমরা আসার পূর্বেই স্থানীয়রা হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
এ ব্যাপারে নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসমাইল হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সাথে উপজেলা প্রশাসনের টিম একত্রিত হয়ে উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করি। আহতদের নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-সহ স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনিছুর রহমানকে প্রধান করে ৫ সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান কুমিল্লা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল হানিফ, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী মো. নির্ঝর এবং বিভাগীয় টেলিযোগাযোগ ও সংকেত প্রকৌশলী জাহেদ আরেফিন তন্ময়।
বগি লাইনচ্যুত হওয়ার সঠিক কারণ খুঁজে বের করে প্রতিবেদন জমা দিতে ৩ দিনের সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, রবিবার দুপুরে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনের ১৮টি বগির মধ্যে ইঞ্জিনের সঙ্গে ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে ছিটকে পড়ে। এতে সারাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে আছে।

জামালপুর গামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের নয়টি বগি লাইনচ্যুতের ঘটনায় ৭ ঘণ্টায়ও শুরু হয়নি উদ্ধারকাজ। এদিকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

রবিবার (১৭ মার্চ ) রাত ৮ টার দিকে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলছে। এদিকে
দুর্ঘটনার ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ১২টি ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে আছে।

চট্টগ্রামস্থ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাত জানান, বিজয় এক্সপ্রেসের নয় বগি লাইনচ্যুত হওয়ার পরেই আমরা চট্টগ্রাম থেকে উদ্ধারকারী ইঞ্জিন ঘটনাস্থলের রাত ৭.৩০ মিনিটে নিয়ে এসেছি। আমাদের কাজ চললাম রয়েছে,আগামীকাল (সোমবার) ভোর ৫টায় বগিগুলো উদ্ধারের কাজ সম্পন্ন হতে পারে। তবে এ বগিগুলো উদ্বারের পর এ রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে আনুমানিক সকাল হবে।

রবিবার রাত ৮ টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় জেলার নাঙ্গলকোটের হাসানপুরে ট্রেনের বগিগুলো অন্ধকারের মাঝে লাইট জ্বালিয়ে উদ্ধার কাজ করছেন শতাধিক রেল শ্রমিক। তারা আশা করছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধার কাজ শেষ করতে পারবে।