নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, উপকূলে ঝড় বন্যায় অনেক ক্ষতি

অধ্যাপক ডা: মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ years ago

নিম্নচাপের জন্য বঙ্গোপসাগর উত্তাল, টানা জোয়ারের পানিতে বরিশাল বিভাগের সবকটি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত। ঐ সকল জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়েছে। ফলে দিনে দুবার পানি ঢুকে পড়েছে জেলাসমূহের অনেক অঞ্চলে। এর কারনে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অনেক মানুষ। বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের জন্য গত রোববার ১১.০৯.২২ইং থেকে মঙ্গলবার ১৩.০৯.২০২২ইং পর্যন্ত এ বিভাগে বৃষ্টি হয়েছে ৪২৭.৩ মিলিমিটার। অথচ পুরো সেপ্টেম্বরে এ বিভাগে স্বাভাবিক বৃস্টি হওয়ার কথা ২৫৯.৪ মিলিমিটার। মোট কথা মাত্র ৫৪ ঘন্টায় পুরো মাসের মোট বৃষ্টিপাতের চেয়েও বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের মত ছিল নিম্নচাপটি বঙ্গোপসাগর থেকে স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হওয়ার কথা এবং এর প্রভাবে আরও বৃষ্টি হবে। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায় বরিশাল নগর পয়েন্টে ১৩.০৯.২২ দুপুর ১২টা পর্যন্ত কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ভোলার দৌলতখান পয়েন্টে মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ পয়েন্টে পায়রা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার এবং বরগুনার পাথরঘাটা পয়েন্টে বিষখালি নদীর পানি বিপদসীমার ৮২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বোর্ড-১) সূত্রে জানা যায় ৩৮০ কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধের মধ্যে ৪২ কিলোমিটার ঝুঁকিপূণ। বিভাগের ২নং বোর্ডের সূত্রে জানা যায় ৪০০ কিলোমিটার বেরিবাঁধের মধ্যে ৪০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কয়েকটি স্থানে কাজ চলেছে বলে দুটি বিভাগই জানিয়েছে। বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ, রামপাল, মোংলা উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে কয়েকশ চিংড়ির ঘের ভেসে যেতে পারে। টানা তিনদিনের জোয়ারে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের এলাকায় পানি যে হারে বাড়ছে তাতে সুন্দর বনের প্রাণিকূল হুমকির মুখে পড়েছে।
বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা জলোচ্ছাসে বছরে প্রায় ১৩০ কোটি ডলার বা ১৩ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে (১৩.০৯.২২ এর হিসাবে ১ ডলার ১০৬ টাকা ধরে) । এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে বছরে ক্ষতি ১০০ কোটি ডলার বা প্রায় ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সম্পদ এবং বন্যা জলোচ্ছাসে ক্ষতি হচ্ছে ৩০ কোটি ডলার বা প্রায় ৩,১৮০ কোটি টাকার। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্যাদি উঠে এসেছে এবং প্রতিবেদনটি গত সোমবার ১২.০৯.২২ইং প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বিশ্বের ৪৮টি ব-দ্বীপ এলাকার জলবায়ু ঝুঁকির একটি তুলনা দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী উপকুলীয় বন্যার ঝুঁকিতে থাকা ব-দ্বীপগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
ঝড়-জলোচ্ছাস থেকে উপকূলীয় বেড়িবাধগুলোকে রক্ষায় সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে এবং সেগুলো অনেকটা সফলতার দিকও দেখেছে বলে বিশ্ব ব্যাংকের ঐ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি বলা হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে নদী খনন ও বাঁধ রক্ষার কাজ একসঙ্গে নেয়ায় উপকূলীয় এলাকা জলোচ্ছাসের কবল থেকে বেঁচে গেছে। অন্যদিকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, কক্সবাজারের হিমছড়ি, ইনানী ও কলাতলী সৈকত রক্ষায় নেয়া উদ্যোগের কারনে ভাঙ্গন বন্ধ হয়েছে। উপকূলের ৬০০ কিলো এলাকা জুড়ে ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় বনভূমি সৃষ্টি করায় সাগরের ঢেউ থেকে বাঁধগুলোর রক্ষা হয়েছে। বাঁধগুলো উচু করার জন্য বাড়তি খরচ লাগছে না। প্রতিবেদন অনুসারে উপকূলের মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ উন্নত ঘরে বসবাস করে। এর মধ্যে সবচে কম মানুষ উন্নত ঘরে থাকে বরগুনায় , ৭ শতাংশ। আর সবচে বেশি ঘরে বাস করে খুলনায়, ৪২ শতাংশ। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার যে অভিযোজন পরিকল্পনা করেছে তা বাস্তবায়নে ২০৫০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতিবছর ৫৭০ কোটি ডলার লাগবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে ২০৫০ নাগাদ দেশের উপকূলীয় এলাকায় জনসংখ্যা বেড়ে ৬ কোটি ১০ লাখে দাঁড়াবে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বাড়লে বাংলাদেশের উপকূলে ৪ হাজার ৮০০ কিলোমিটার এলাকা ডুবে যেতে পারে। এসকল কারনে উপকূলীয় মানুষের জীবন ও সম্পদের আরও ক্ষতি বাড়তে পারে।

সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ

সদস্য, কেন্দ্রিয় কাউন্সিল, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)