চৌদ্দগ্রামে আ’লীগের সাবেক মন্ত্রীর দলীয় কার্যালয় এখন  বিএনপির কার্যালয়

নাম দেওয়া হয়েছে ‘শহীদ জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) হল’
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৬ মাস আগে

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম সদরে সদ্য সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) ও সাবেক রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হকের কার্যালয়টি দখলে নিয়েছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। বর্তমানে সেটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘শহীদ জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) হল’।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, ২০১৯ সালের শেষের দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম সদরে বিলুপ্ত হওয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) একটি পরিত্যক্ত হলরুম নিজের কবজায় নেন তৎকালীন সংসদ সদস্য মুজিবুল হক। কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের এই সাবেক সংসদ সদস্য কিছুদিনের মধ্যেই হলরুমটি সংস্কার করে নিজের কার্যালয় বানান।

হলরুমের জায়গাটির প্রকৃত মালিক কুমিল্লা জেলা পরিষদ। ২০২০ সালের শুরুর দিকে নির্মাণকাজ শেষ হলে চৌদ্দগ্রাম গেলেই ওই কার্যালয়ে বসতেন মুজিবুল হক, সেখানে দলীয় বিভিন্ন সভাও হতো।

এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করে মুজিবুল হকের ব্যবহৃত মুঠোফোন ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

স্থানীয় মানুষের ভাষ্য, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা ও চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক হারুনুর রশিদের অনুসারীরা কার্যালয়টি দখলে নিয়েছেন। দখলের সময় হারুনুর রশিদ নেতৃত্ব দেন।

তবে বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদের দাবি, তাঁরা কার্যালয়টি উদ্ধার করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রেখেছেন। সরকার চাইলে যেকোনো মুহূর্তে তাঁরা এটি ফিরিয়ে দিতে রাজি আছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম বাজারের মাঝামাঝি এলাকায় কার্যালয়টির অবস্থান। মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের ডান পাশে রয়েছে একতলাবিশিষ্ট টিনশেড ভবনটি। হলরুমটির পাশেই নির্মিত হচ্ছে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার তিনতলাবিশিষ্ট একটি বিপণিবিতান।

স্থানীয় মানুষের ভাষ্য, হলরুমটি সংস্কারের সময় ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তোলেন মুজিবুলের অনুসারীরা। ২০২০ সালের শুরু থেকে ৫ আগস্টের আগপর্যন্ত মুজিবুল হক যখনই চৌদ্দগ্রাম সদরে এসেছেন, তখনই ওই কার্যালয়ে বসতেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ও এটি ছিল তাঁর নির্বাচনী প্রধান কার্যালয়। ক্ষমতার পালাবদলের পর গত ১৫ আগস্ট স্থানীয় ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীরা কার্যালয়টিতে অবস্থান করেন। এর দুই দিন পরই বিএনপির নেতা–কর্মীরা মুজিবুলের ওই রাজনৈতিক কার্যালয় নিজেদের দখলে নেন। টানিয়ে রেখেছেন বিএনপির নেতা–কর্মীদের নানা ব্যানার-ফেস্টুন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে কার্যালয়টি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক দল ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা চেয়েছেন কার্যালয়টির দখলে নিতে। তাঁরা বিষয়টি জানতে পেরে হলরুমটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। কেউ যেন দখলের সাহস না করেন, এ জন্য হলরুমের নাম রাখা হয়েছে ‘শহীদ জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) হল’।

এ প্রসঙ্গে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘বিভিন্ন কাজের চাপে বিষয়টি আমাদের নজরে আসেনি। তবে শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এভাবে সম্পত্তি দখল করে রাজনৈতিক কার্যালয় করার কোনো সুযোগ নেই।’